Sunday, February 24, 2019

নিহত ছিনতাইকারীর পরিচয় উদ্ধারের দাবি র‌্যাবের

ঢাকা

আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৩:০৮

manকমান্ডো অভিযানে নিহত অস্ত্রধারী তরুণ।চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বিমানের ময়ূরপঙ্খী উড়োজাহাজ ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে কমান্ডো অভিযানে নিহত ব্যক্তির নাম-পরিচয় উদ্ধারের দাবি করেছে র‌্যাব। আজ সোমবার র‌্যাবের পাঠানো খুদে বার্তায় বলা হয়েছে, অপরাধীদের তথ্যভান্ডার অনুযায়ী ওই ব্যক্তির নাম মো. পলাশ আহমেদ।

র‌্যাব বলছে, গতকাল রোববারের কমান্ডো অভিযানে নিহত ওই যুবকের আঙুলের ছাপ র‌্যাব ক্রিমিনাল ডেটাবেইসের একজন অপরাধীর সঙ্গে মিলে যায়। সেখানে রক্ষিত তথ্য অনুযায়ী, তাঁর নাম মো. পলাশ আহমেদ। তাঁর বাবার নাম পিয়ার জাহান সরদার। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের পিরিজপুরে তাঁর বাড়ি।

এ ছাড়া ময়ূরপঙ্খী উড়োজাহাজটির (বিজি-১৪৭ ফ্লাইট) যাত্রী তালিকা অনুযায়ী, পলাশ আহমেদ অভ্যন্তরীণ রুটের (ঢাকা-চট্টগ্রাম) যাত্রী ছিলেন। তাঁর নাম উল্লেখ ছিল AHMED/MD POLASH। সিট নম্বর ১৭এ।

গতকাল রোববার ময়ূরপঙ্খী উড়োজাহাজটি ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিকেল ৫টা ৫ মিনিটে ছেড়ে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাই যাওয়ার কথা ছিল। ঢাকা থেকে উড্ডয়নের পরই উড়োজাহাজটি ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে। প্রায় দুই ঘণ্টার টান টান উত্তেজনার পর উড়োজাহাজ ছিনতাইচেষ্টার অবসান ঘটে। গতকাল সন্ধ্যা ৭টা ২৪ মিনিটে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মাত্র আট মিনিটের কমান্ডো অভিযানে উড়োজাহাজটিতে থাকা অস্ত্রধারী তরুণ নিহত হন।

চকবাজারের আগুনের লেলিহান

মাসিক নিয়মিতকরণে ওষুধ জনপ্রিয় হচ্ছে


 pill

দেশে নারীদের কাছে ওষুধের মাধ্যমে মাসিক নিয়মিতকরণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে প্রশিক্ষণহীন স্বাস্থ্যকর্মীর কাছ থেকে ও দোকান থেকে ওষুধ খেয়ে বহু নারীর স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞ ও গবেষকেরা বলছেন, নারীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি দূর করে এই ওষুধ সহজলভ্য করতে হবে।

‘ওষুধের মাধ্যমে মাসিক নিয়মিতকরণে মানসম্মত সেবা ব্যবস্থার গবেষণা ফলাফল’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তাঁরা এ কথা বলেন। নারী অধিকার সংগঠন নারীপক্ষ গতকাল রোববার সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এ সভার আয়োজন করেছিল। সভায় ওষুধের মাধ্যমে মাসিক নিয়মিতকরণে সেবার মান ও পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করা হয়।

প্রজনন স্বাস্থ্যবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইপাস বাংলাদেশের দেশীয় পরিচালক ডা. সাইদ রুবায়েত বলেন, দেশে প্রতিবছর ২৮ লাখ নারী ইচ্ছার বিরুদ্ধে বা অজান্তে গর্ভধারণ করেন। তাঁদের মধ্যে প্রায় সোয়া চার লাখ নারী মাসিক নিয়মিতকরণের পন্থা বেছে নেন, বাকি ১২ লাখ নারী গর্ভপাত ঘটান।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সরকার ২০১৩ সালে ওষুধের মাধ্যমে মাসিক নিয়মিতকরণ পদ্ধতি চালু করে। এর আগে মাসিক নিয়মিতকরণে যন্ত্র ব্যবহার করা হতো। বর্তমানে যন্ত্র ও ওষুধ দুই–ই ব্যবহৃত হচ্ছে।
নারীপক্ষ ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, বরিশাল সিটি করপোরেশন এবং বরগুনা জেলার চারটি উপজেলার চারটি ইউনিয়নে ওষুধের মাধ্যমে মাসিক নিয়মিতকরণ সেবার ওপর একটি গবেষণা করেছে। গবেষণায় দলগত আলোচনা, সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, এনজিও কর্মকর্তা ও ওষুধের দোকানিদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন প্রধান গবেষক ও নারীপক্ষের সদস্য ড. তাসনিম আজিম। তিনি বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে শহর ও গ্রামের নারীদের কাছে এবং যৌনকর্মীদের কাছে মাসিক নিয়মিতকরণের ওষুধ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। নারীরা সহজে এই ওষুধ পেতে চান, তবে তাঁরা গোপনীয়তার বিষয়েও নিশ্চয়তা চান। অনেক নারী এটাই মনে করেন যে, বয়স ও বৈবাহিক অবস্থা নির্বিশেষে সব নারীর কাছে এই ওষুধ সহজপ্রাপ্য হওয়া উচিত। যদিও কিছু নারীর এ ব্যাপারে দ্বিমত আছে।
এই ওষুধের ব্যাপারে মানুষকে জানাতে বা সচেতন করতে কোনো কর্মসূচি নেই। সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানে এই ওষুধ এখনো পাওয়া যায় না।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা) মোহাম্মদ শরীফ বলেন, মানুষকে সচেতন ও সেবা সহজলভ্য করার জন্য এমআর নেটওয়ার্ককে শক্তিশালী করা হবে। স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বছরে সাত-আট লাখ নারী মাসিক নিয়মিতকরণ করেন, কিন্তু এক থেকে দেড় লাখ ঘটনা লিপিবদ্ধ করা হয়।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সেপটিক অ্যাবরশনের (বাপসা) গবেষণা উপদেষ্টা ড. জামিল হোসাইন চৌধুরী বলেন, দোকান থেকে ওষুধের পাশাপাশি নারীরা যেন সঠিক পরামর্শ পান, সে জন্য বিক্রেতাদের উদ্বুদ্ধ করতে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে কাজ করতে হবে। নারীকে সঠিক তথ্য দিতে গণমাধ্যমকেও এগিয়ে আসতে হবে।
নারীপক্ষের নিরাপদ গর্ভপাত অধিকারের দাবিতে প্রকল্পের পরিচালক সামিয়া আফরীনের সঞ্চালনায় বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা তাঁদের কাজ করার অভিজ্ঞতা সভায় বর্ণনা করেন।

পিকআপে সিলিন্ডার ছিল না

Fire Brunt
রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টা মোড়ে ওয়াহেদ ম্যানশনের সামনে রাখা পিকআপটি ফাঁকা ছিল। গ্যাস সিলিন্ডার ছিল না, চলত ডিজেলে। অথচ এই পিকআপটিতে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার ছিল এবং সেখান থেকেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল বলে দাবি করে আসছিলেন চুড়িহাট্টা এলাকার ব্যবসায়ী ও বাড়ির মালিকেরা।

চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ আগুনের ঘটনার চার দিন পর গতকাল রোববার পিকআপটির (ঢাকা মেট্রো ন ১৭-৩১৭১) মালিক মো. দুদু মিয়া ঘটনাস্থলে এসেছিলেন। তিনি প্রথম আলোক বলেছেন, পিকআপটি তাঁর নিজের। চালাতেন নিজেই। এটি তাঁর জীবিকার একমাত্র সম্বল ছিল।

ওয়াহেদ ম্যানশনের ভূগর্ভে থাকা রাসায়নিকের গুদাম গতকালও অপসারণ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। তবে গতকালও বাড়িটির পলাতক দুই মালিককে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

চুড়িহাট্টা মোড়ের ঘটনাস্থলকে ঘিরে সকাল থেকেই ছিল উৎসুক মানুষের ভিড়। মোড়ে যাওয়ার পাঁচটি সড়কেই পুলিশ সদস্যদের পাহারা রয়েছে। তাঁদের টপকে ঘটনাস্থলে যেতে মানুষের পীড়াপিড়ি ছিল চোখে পড়ার মতো। সাধারণ মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন পুলিশের সদস্যরা।
গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে গঠিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেছেন, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীসহ ৩৫ জনের সঙ্গে তাঁরা ইতিমধ্যে কথা বলেছেন। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদও সংগ্রহ করেছেন। তদন্তের দ্বিতীয় ধাপে তাঁরা গতকাল পরিদর্শনে আসেন বলে জানান।
পিকআপের মালিক দুদু মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, সেদিন সাভারের নামাগেন্ডা এলাকা থেকে খালি পিকআপ নিয়ে তিনি চুড়িহাট্টায় গিয়েছিলেন। ওয়াহেদ ম্যানশনের নিচতলার একটি দোকান থেকে প্লাস্টিকের দানা নিয়ে ফেরার কথা ছিল। পিকআপটি ওয়াহেদ ম্যানশনের সামনে রেখে তিনি দোকানে যান। দোকানদার নাহিদ তখন তাঁকে জানান, পিকআপে জিনিস তোলার লোক নেই। এর ফাঁকে পাশের রাজমহল হোটেল থেকে তিনি নাশতা করে আসছেন বলে বের হয়ে আসেন। হোটেলে ঢুকে ‘রুটি’ মুখে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এরপর তিনি দৌড়ে হোটেল থেকে বের হয়ে আসেন। চার–পাঁচ শ গজ দূরে এসে দাঁড়িয়ে দেখেন পারফিউমের ক্যান চারদিকে ছিটকে পড়ছে।
দুদু মিয়া বলেন, গাড়িটি তাঁর নিজের এবং এটিই তাঁর জীবিকার অবলম্বন ছিল। ঘটনার পর ২২ তারিখ এসে চকবাজার থানায় তিনি সাধারণ ডায়েরি করে গেছেন। এখন ইনস্যুরেন্স থেকে টাকা পেলে কিছুটা হলেও উপকৃত হবেন।
পুরান ঢাকার চকবাজারে চুড়িহাট্টা মোড়ে ভয়াবহ আগুনে ৬৭ জন মারা যান। ঘটনার পরপর বিস্ফোরণের উৎস ও কারণ নিয়ে নানা বক্তব্য আসতে থাকে। চুড়িহাট্টা মোড়ে বিদ্যুতের কোনো ট্রান্সফরমার না থাকলেও সেখান থেকে আগুনের উৎপত্তি হয়েছিল বলে দাবি করেন কেউ কেউ। কেউ বলেন, ওয়াহেদ ম্যানশনের সামনে থাকা দুদু মিয়ার এই পিকআপ হঠাৎ বিস্ফোরিত হয়ে ওপরে ওঠে। এরপর আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। আবার কারও কারও দাবি, দুদু মিয়ার পিকআপ বা যানজটে আটকা একটি পিকআপের ওপর থাকা এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
তবে ওয়াহেদ ম্যানশনের পাশের রাজমহল হোটেলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ, শেখ হায়দার বক্স লেনের একটি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা থেকে জানা যায়, ওয়াহেদ ম্যানশনের দোতলা থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল। সেখানে সুগন্ধির ক্যান ও বাল্বের গুদাম ছিল। লাইটার রিফিল করার ক্যানও সেখানে পাওয়া গেছে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর ওয়াহেদ ম্যানশনের মালিক দুই ভাই হাসান ও সোহেলকে আসামি করে চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন চুড়িহাট্টা এলাকার এক বাসিন্দা। কিন্তু ঘটনার পর থেকে তাঁরা পলাতক রয়েছেন। এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের চকবাজার অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের গ্রেপ্তারে পুলিশের একটি দল কাজ করছে।